একে মিলন সুনামগঞ্জ থেকে:
আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ঘনিয়ে এলেও নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দিতে কোনো ধরনের বিলম্ব হবে না বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
তিনি জানান, নির্বাচনের আগেই বই বিতরণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে বই পৌঁছে যাবে সময়মতো।
রোববার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছন রাজা মিলনায়তনে ‘প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন গণশিক্ষা উপদেষ্টা।
অধ্যাপক বিধান রঞ্জন বলেন, নির্বাচনের জন্য প্রশাসনিক ব্যস্ততা বাড়লেও বই বিতরণ কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না। ইতিমধ্যে প্রিন্টিং, প্যাকেজিং ও বিতরণ প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে চলছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের আগেই বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে যাবে, যাতে বছরের প্রথম দিনেই শিশুরা নতুন বই হাতে পায়।
তিনি আরও বলেন, বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি শিক্ষার প্রতি রাষ্ট্রের অঙ্গীকার। তাই এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গণশিক্ষা উপদেষ্টা জানান, প্রাথমিক শিক্ষায় মানোন্নয়নের জন্য সরকার উপজেলা ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে যাচ্ছে।
এখন থেকে উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। এতে স্থানীয় মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে পারবেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলেও জানান অধ্যাপক বিধান রঞ্জন।
তিনি আরও যোগ করেন, একজন শিক্ষক যদি নিজের এলাকার শিশুদের পড়ান, তাহলে তিনি শুধু পাঠদান নয়, শিশুদের ব্যক্তিগত বিকাশেও ভূমিকা রাখবেন। এটি শিক্ষার মান উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে।
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, শিক্ষার্থীরা আজকাল পরীক্ষার খাতায় উত্তর মুখস্থ করে লিখে নম্বর নিচ্ছে, সার্টিফিকেট পাচ্ছে কিন্তু বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না। মুখস্থ বিদ্যা কোনো বিদ্যা নয়। শিশুদেরকে চিন্তা করতে শেখাতে হবে, প্রশ্ন করতে শেখাতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, শিক্ষার মূল লক্ষ্য সৃজনশীলতা ও চরিত্র গঠন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা যদি পরবর্তীতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকতে না পারে, তাহলে তা শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা নির্দেশ করে।
উপদেষ্টা জানান, প্রাথমিক শিক্ষায় প্রযুক্তি ও পুষ্টি দুই দিকেই নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শিশুরা এখন শুধু বইয়ের পাতা নয়, ডিজিটাল কনটেন্ট দিয়েও শিখবে। তাছাড়া ১৫০টি উপজেলায় ‘মিড-ডে মিল’ কর্মসূচি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে সব জেলায় চালু হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার সঙ্গে পুষ্টির সম্পর্ক গভীর। ক্ষুধার্ত শিশুর মনোযোগ কখনো শেখার দিকে থাকে না। তাই প্রতিটি স্কুলে খাবারের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা হবে।
সেমিনার শেষে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাতে সম্মাননা সনদ তুলে দেন গণশিক্ষা উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরাও বক্তব্য রাখেন। তারা প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়ন এবং স্কুলে উপস্থিতি বাড়াতে স্থানীয় সরকারের সহযোগিতা বৃদ্ধির দাবি জানান।
অধ্যাপক বিধান রঞ্জন তার বক্তব্যে বলেন, গণশিক্ষা মানেই শুধু বিদ্যালয়ের চার দেয়াল নয়; এটি জাতীয় উন্নয়নের প্রথম ধাপ। আমরা চাই, প্রতিটি শিশুই যেন সমান সুযোগ পায়, আর্থিক অবস্থা যাই হোক না কেন।
তিনি আরও বলেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। এর জন্য শিক্ষক, অভিভাবক, সমাজ ও প্রশাসন সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
উপদেষ্টা জানান, আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যায়ক্রমে ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’ চালু করা হবে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় শিক্ষকদের জন্য ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
আমরা চাই, শিশুরা যেন বইয়ের পাশাপাশি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখে বড় হয়। এভাবেই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply